দক্ষিণ ২৪ পরগনা : টানা বৃষ্টিতে ধানচাষিদের মুখে হাসি ফুটলেও হতাশ সবজি চাষিরা। জমিতে জল জমায় নষ্ট হচ্ছে ফসল। ফলে, আগামী দিনে বাজারে সবজির জোগান কমতে পারে। সেক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে তা আরও বাড়তে পারে বলেই ইঙ্গিত। গত সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে লাগাতার বৃষ্টি। বৃষ্টিতে কার্যত নাজেহাল সাধারণ মানুষ থেকে চাষিরা। কোথাও কোথাও জল জমে রয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার অর্থনীতি অনেকটাই দাঁড়িয়ে কৃষিকাজের উপর। যার মধ্যে অন্যতম হল সবজি চাষ। কিন্তু, লাগাতার বৃষ্টিতে সবজি চাষে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
বেগুন, লঙ্কা, টম্যাটো, উচ্ছে, পটল, পেঁপে সহ একাধিক সবজির জমিতে জমে রয়েছে জল। ফলে, মাঠে থাকা সজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যেই বাজারে বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম। গত সপ্তাহে পটল ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে তা গিয়ে ঠেকেছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। একই ভাবে বেগুন ৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি একশো টাকা। ঝিঙে ৪০, ওল একশো টাকা এগুলির দাম ছিল সবই ৪০ টাকার নীচে। পেঁপে গাছেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন শাকের দাম আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।
আরও পড়ুন- গৃহবধূরা এখন স্বনির্ভর, তাঁদের ছোঁয়ায় নজরকাড়া পুজোর পোশাক ফুটে উঠছে
এ প্রসঙ্গে সুন্দরবনের এক চাষি জানান, ক’দিনের বৃষ্টির জেরে সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত কয়েক হাজার টাকার সামগ্রী নষ্ট হয়েছে। এর পাশাপাশি পেঁপে গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, “ভারী বৃষ্টির কারণে চাষিদের ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ কতটা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
সুমন সাহা
মাজদিয়া: মিড ডে মিলের খাবার খেয়ে অনেক সময় ছাত্র-ছাত্রীদের শরীর খারাপ হতে দেখা গিয়েছে। কখনও মিড ডে মিলে দেওয়া খাবারের গুণগত মান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন কিংবা কখনো তাতে পাওয়া গিয়েছে নানা রকম পোকামাকড়। এই ধরনের খবর বেশিরভাগ সময়ই উঠে আসে শিরোনামে। তবে ব্যতিক্রম কার্যকলাপ ও দেখা যায় বেশ কিছু জায়গায়। তার মধ্যে অন্যতম মাজদিয়া রেলবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে প্রধান শিক্ষক সুকুমার হালদারের উদ্যোগে বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে মিড ডে মিলের সবজি চাষ করে সেই সবজি পরিবেশন করা হয়, পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের খাবারে।
আরও পড়ুন: ব্যবসার প্রয়োজনে স্বামীর পরিবার টাকা দাবি করলে তা যৌতুক নয়: এলাহাবাদ হাই কোর্ট
বাজারে বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দেওয়া হয় শাকসব্জিতে। এই ধরনের শাকসব্জি খেয়ে বিশেষ করে শিশুদের নানা রকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে বলে জানান চিকিৎসকেরা। আর সেই কারণেই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জি লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তবে শুধু গাছ লাগানোই নয়, সেগুলি নিয়মিত পরিচর্যা করে বড় করে তোলা সমস্ত কিছুই দেখভাল করেন তিনি। এরপর সেই গাছের সব্জি দিয়েই রান্না করা হয় মিড ডে মিল। এতে যেমন শিশুরা ভেজাল বিহীন উন্নত শাকসবজি খেতে পারছে ঠিক তেমনি অন্যদিকে বর্তমানে অগ্নিমূল্য বাজারের থেকে কিছুটা হলেও পয়সা সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
আরও পড়ুন: বাংলাকে টুকরো টুকরো করার পরিকল্পনা! দিল্লি যাওয়ার পথে বিস্ফোরক মমতা
শিক্ষকের এই উদ্যোগের ফলে খুশি পড়ুয়া থেকে শুরু করে অভিভাবকেরাও। তারা জানান, এই ধরনের উদ্যোগ প্রত্যেকটি বিদ্যালয়েরই নেওয়া উচিত। প্রায় সমস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়াতেই উঠোন কিংবা প্রাঙ্গণের বেশ কিছুটা জায়গা থাকে। সেই জায়গাগুলিতে যদি এভাবে মিড ডে মিলের শাকসব্জি উৎপাদন করা হয় তাতে যেমন আর্থিক সাশ্রয় হবে ঠিক তেমনি বাজারের ভেজাল জাত সবজি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে তাদের ছেলে মেয়েরা, এমনটাই মত অধিকাংশ অভিভাবকদের।
মুর্শিদাবাদ: বাজারের ব্যাগ ভরাতে গিয়ে রীতিমত নাভিশ্বাস অবস্থা মধ্যবিত্তের। ঊর্ধ্বমুখী প্রায় প্রতিটি সব্জির দাম। আগে বাজারে যে সমস্ত সবজি অল্প দামে পাওয়া যেত, সেই সকল সব্জির দাম এখন বেড়েছে অনেকটাই। বিশেষজ্ঞদের দাবি, দেরিতে বর্ষা ঢোকার কারণে এবং বৃষ্টিপাতের ঘাটতির কারণের জন্য সব্জির উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। সেই কারণেই আকাশচুম্বি আনাজের দাম।
আরও পড়ুন: চাকরিজীবীদের জন্য বিপুল সুবিধা! বাড়ল স্ট্যানডার্ড ডিডাকশনের পরিমাণ, ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর
বর্তমানে নিত্যদিন বাড়ছে সবজির দাম। যার কারণে মাথায় হাত সাধারণ মানুষের। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে টাস্ক ফোর্সের তরফ থেকে। আর সেই অভিযান চালাতে গিয়েই দেখা গেল অন্য চিত্র। সব্জির দামে পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে দেখা গেল বিস্তর ফারাক। যা নজরে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের। মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত সব্জির বাজার। এই বাজারের ওপর নির্ভর করে থাকে বিভিন্ন ব্লকের মানুষজন। কান্দি বাসস্ট্যান্ডের বাজারে পাইকারি এবং খুচরো দু’টি বাজারই অবস্থিত।
আরও পড়ুন: সস্তা হচ্ছে সোনা, রুপো! গয়না কিনলে বিশেষ সুবিধা পাবেন, বড় ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর
যদিও বিক্রেতাদের দাবি, অকাল খরা, আকাশে বৃষ্টি নেই, ফলে সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া হয়েছে। পাইকারি বাজারে অনেক কিছু বাদ থাকে। একনজরে দামের তালিকাঃ বেগুন ৪০টাকা, শসা ২০টাকা, ডাঁটা ১৪০-১৬০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এমনকী আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি প্রতি হিসাবে। পাইকারি বাজারে আলু বর্তমানে ৫০কেজি বস্তা ১২৫০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে ফলে এক কেজি আলুর দাম হওয়া উচিৎ ২৫টাকা। কিন্তু খুচরো বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি প্রতি হিসেবে। অন্য দিকে, পিঁয়াজ ৩০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পটল ৬০, ঝিঙে ৮০, উচ্ছে ৮০, সজনে ডাঁটা ২৬০, ক্যাপসিক্যাম ১২০, বিন ২০০, কাঁচা লঙ্কা ১৫০, ঢ্যাঁড়শ ৭০। কচু ৮০, জ্যোতি আলু ৩৫, চন্দ্রমুখী আলু ৪০, পেঁয়াজ ৫০, আদা ২৫০, রসুন ৩০০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে।
তমলুক: শ্রাবণ মাসেও রেহাই নেই মধ্যবিত্ত বাঙালির। হাঁড়ি টানতে নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। কারণ, হু হু করে বাড়ছে সবজির দাম। সবজির দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক করে প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত বাজারদর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও নড়েচড়ে বসে। মলুক মহকুমা প্রশাসন এদিন তমলুকের রেগুলেটেড মার্কেটে অভিযান চালায়। মার্কেটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তমলুকের এসডিও দিব্যেন্দু মজুমদার, এসডিপিও সহ অন্যান্যরা।
সাধারণত বর্ষাকালে শাক-সবজির দাম কম থাকে। কিন্তু চলতি বছর বৃষ্টির আকাল দক্ষিণবঙ্গে। শাকসবজির দাম বাড়ছে প্রতিদিনই। বাজার করতে গিয়ে কার্যত ছ্যাঁকা খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরো বাজারে শাকসবজির দাম অনেকটাই বেশি। আর তাতে সাধারণ মধ্যবিত্ত সংসারে হাঁড়িচড়া দায় হয়ে উঠেছে। সবজির দামে লাগাম টানতে বাজারে প্রশাসনিক অভিযান চলছে। অভিযানের পরে সাময়িকভাবে দাম কমলেও সুযোগ বুঝে তা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বৃষ্টির জেরে সবজি ও আলুর দাম বেড়ে গিয়েছে বলে যুক্তি খাড়া করা হচ্ছে।
বাজারের সবজি বিক্রেতারা জানান, এ বছর বর্ষার খামখেয়ালিপনা দেখা দিয়েছে। ফলে চাষবাস ঠিকমত হয়নি। সবজির দামও আকাশছোঁয়া। কিন্তু এ কথা মেনে নিতে নারাজ সাধারণ মানুষ। তাঁদের অভিযোগ এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তাঁদের ইচ্ছেমতো বাজারদর ঠিক করছেন। যার ফলে অসুবিধায় পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আনতে তাই এবার বিভিন্ন বাজারে বাজারে প্রশাসনিক অভিযান চলছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর তমলুকের রেগুলেটেড মার্কেটে ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার অভিযান চালায় তমলুকের জেলার মহকুমা শাসক।
আরও পড়ুন-এরকম অ্যাম্বুলেন্স কেউ দেখেছেন? মানুষ নয়, কোন রোগীদের পরিসেবায় এই বাহন! জেনে নিন
কোন কোন সবজি কী দামে বিক্রি করা হচ্ছে, সঠিক দামে বিক্রি করা হচ্ছে কি না তা এদিন প্রশাসনিক কর্তারা বাজার ঘুরে ঘুরে দেখেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। কিছু কিছু জিনিসের দাম ঠিক থাকলেও বেশকিছু জিনিসের দাম একটু বেশি। সেগুলি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার কথা জানানো হয়েছে। আগামী দিনেও একই ভাবে জেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চলবে বলে জানান প্রশাসনিক কর্তারা। এর পাশাপাশি তমলুকের রেগুলেটেড মার্কেটে সবজি-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের বাজারদর প্রতিদিন ডিসপ্লে বোর্ডে লেখা থাকবে বলেও জানা যায় প্রশাসন সূত্রে।
সৈকত শী