সার্থক পণ্ডিত, তুফানগঞ্জ: কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার চিলাখানা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১২ টি পরিবার বংশপরম্পরায় তৈরি করে আসছেন বিভিন্ন প্রতিমা। এখানে প্রতিমা নির্মাণ থেকে শুরু করে রঙ করা এবং চক্ষুদান পর্যন্ত করেন মহিলারাই। চিলাখানা বাজারের সামনে এলেই তাঁদের দেখা মেলে। মোট ১২ টি পরিবারে ২৯ জন মহিলা সদস্য রয়েছেন। কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বাড়ির মহিলারা পর্যন্ত হাত লাগান এই মূর্তি নির্মাণের কাজে। বছরের এই সময় তাদের নাওয়া খাওয়ার সময় থাকে না একদম। সকাল ৬’টা থেকে শুরু প্রায় রাত পর্যন্ত চলে তাঁদের মূর্তি গড়ার কাজ। তবে এই কাজ চলে দফায় দফায়।
শুধুমাত্র কোচবিহার নয়, পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসম থেকেও প্রচুর বিগ্রহের অর্ডার আসে। সেখানেও যোগান দিতে হয় প্রতিমা। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০০-৩৫০ মূর্তি তৈরি করতে হয় এই সময়। ইতিমধ্যেই ভিনরাজ্যে বিপণনের জন্য মূর্তির কাজ অনেকটাই শেষ হয়ে গিয়েছে। কিছু কাজ বাকি রয়েছে তবে তা অবিলম্বে শেষ হয়ে যাবে। মহিলা প্রতিমা শিল্পী অঞ্জনা পাল ও যমুনা পাল জানান, “পুরুষরা শুধুমাত্র হাত লাগায় মূর্তির কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে। শুধুমাত্র কাঠামো গড়ে দেওয়ার ছাড়া বাকি সম্পূর্ণ কাজ তাঁরাই করেন। এখানে বারোটি পরিবার রয়েছে। যাঁরা শুধুমাত্র মূর্তি নির্মাণ এবং মাটির অন্যান্য সামগ্রী তৈরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।”
আরও পড়ুন : ইতিহাসে ডুব দিতে পুজোর ছুটিতে স্বল্প খরচে দেখুন কাটরা মসজিদ ও হাজারদুয়ারি
অন্যান্য মৃৎশিল্পীরা জানান, “এই বছর মূর্তির চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তাই সব মিলিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে এই মৃৎ শিল্পীদের। যদিও বা এসবের সঙ্গে রয়েছে সাংসারিক কাজের চাপ। ভোর ৫ টায় উঠে স্নান করে বাড়ির কাজ করে তারপরে এই মূর্তি তৈরির কাজে হাত লাগাতে হয় তাঁদের। মাঝে এক ফাঁকে সারাদিনের রান্নার কাজ দ্রুত সেরে নেন। এই ভাবেই চলছে বিগত প্রায় মাস দু’য়েক ধরে।” তবে চলতি বছর তাঁরা অনেকটাই খুশি মূর্তির চাহিদার বৃদ্ধির কারণে। এতে তাঁদের ঘরে বেশ কিছুটা বেশি মুনাফা আসবে এই কারণে।
তবে জেলার এই প্রতিমা কারখানা গুলি যে কোনও মানুষকে সহজেই আকর্ষণ করতে পারবে এটুকু নিশ্চিত। এখানের প্রতিমাগুলিকে নিপুণ হাতে তৈরি করা হয়। তাই প্রতিমাগুলির সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া যায় অনেকটাই বেশি।