পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলার নতুনগ্রাম। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই জড়িত রয়েছেন শিল্পের সঙ্গে। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও কাজ করেন। বর্তমানে এই এই গ্রাম অনেকের কাছেই বেশ জনপ্রিয়। বিদেশি পর্যটকদেরও যাতায়াত বেড়েছে এই গ্রামে। এক কথায় বলতে গেলে শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থেকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই জীবনযাপন করছেন গ্রামের শিল্পীরা। অনেকের কাছে এই গ্রাম শিল্পিগ্রাম, আবার বিভিন্ন জনের কাছে কাঠ পুতুলের গ্রাম নামেও পরিচিত।নতুন গ্রামের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু এই গ্রাম একসময় ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। ছিলনা কোনও জনবসতি। একদল কাঠুরিয়া কাঠ কাটতে এসে এখানে এই গ্রাম গড়ে তোলেন। নাম হয় নতুন গ্রাম। সেখানে থাকতে শুরু করেন সূত্রধররা। প্রথমে পাথরের মূর্তি গড়লেও পরে তাঁরা এই কাঠের শিল্পকে আপন করে নেন।
এই প্রসঙ্গে গ্রামের শিল্পী জয়দেব ভাস্কর বলেন, “প্রথমে এই গ্রামে আগে পাথরের কাজ হত। পরবর্তীতে ঠাকুরের কাজ করতেন সকলে। কিন্তু ঠাকুরের কাজে সেভাবে রোজগার হতনা। তাই পেশা বদলে কাঠের কাজের সঙ্গে সকলে নিযুক্ত হয়। যেহেতু বাঙালির ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মীর পুজো হয়। সেই কারণে পেঁচার চাহিদার কথা মাথায় রেখে শুরু হয় কাঠের পেঁচা তৈরি। কিন্তু এখন পেঁচা ছাড়াও আরও বিভিন্ন জিনিস তৈরি হয়। শিল্পের বাজার এখন ভাল। এখানকার জিনিস আমি অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা-সহ আরও বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছি। বিদেশী পর্যটকরাও এখন এখানে ঘুরতে আসছেন। কয়েকদিন আগেও বিদেশীরা এসেছিলেন আমার কাছে জিনিস কিনেছেন , হাতের কাজও দেখে গিয়েছেন। “
রথের মেলা, রাসযাত্রা,জয়দেবের মেলা-সহ সব মেলাতেই নতুনগ্রামের বিভিন্ন কাঠের পুতুলের চাহিদা বরাবরের। চাহিদা বেড়েছে মঞ্জুষা, বিশ্ববাংলার স্টলে। তবে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে বিশ্বজোড়া বাজার পেয়েছে নতুনগ্রাম। রাজ্য দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার আসছে অনলাইনে।
শিল্পীরা তাদের কাজেও বিভিন্ন ধরনের নতুনত্ব নিয়ে আসছেন। দিনের পর দিন পরিশ্রম করে নতুন জিনিস তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের শিল্পীরা। পূর্ব বর্ধমানের এই গ্রামে এখন বিদেশী পর্যটকেরাও আসতে শুরু করেছেন। একবার ভেবে দেখুন একসময় যে গ্রাম ছিল জঙ্গলে ঢাকা , আজ সেই গ্রামের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশেও।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী