আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান: বছর ছয়-সাত আগে পর্যন্ত ছবিটা ছিল একদম অন্যরকম। বিশ্বকর্মা পুজো এখানে ছিল সবথেকে বড় উৎসব। ৩৭টি বিশ্বকর্মা পুজো হত এখানেই! পুজোর চার পাঁচ দিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত প্রস্তুতি। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে চলত অলিখিত লড়াই। কে কত ভাল পুজো করতে পারে, প্রসাদ খাওয়ানোয় কে এগিয়ে, এই ব্যাপারে কার্যত প্রতিযোগিতার আসরে নামতেন উদ্যোক্তারা।
আলোয় সেজে উঠতো গোটা এলাকা। কিন্তু হঠাৎ করেই নেমে এসেছে অন্ধকার। বিগত ছয় বছরে ছবিটা একদম বদলে গিয়েছে। এখন বিশ্বকর্মা পুজো মানে আর এখানে উৎসব নয়। বিশ্বকর্মা পুজো এখানে মন খারাপের একটা দিন। বার্নপুরের বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি। কেন্দ্রীয় সরকারের বদান্যতায় চলা একটি কারখানা। যার দরজা বন্ধ হয়েছে ২০১৮ সালে। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত এই এলাকাটি বিশ্বকর্মা পুজোর আগে থেকে উৎসব মুখর হয়ে উঠত।
আরও পড়ুন- বাড়ির লোক খোঁজ নেয় না, ৫ বছর ধরে হাসপাতালই ঠিকানা বারুইপুরের ‘শান্তিবুড়ি’র!
কিন্তু এখন বিশ্বকর্মা পুজো এলেই মন খারাপ হয়ে যায় গোটা এলাকার। একটা সময় যারা কারখানায় কাজ করতেন, বা পরিবারের কেউ কাজ করেছেন, অথবা পাশের বাড়ির কেউ কাজ করেছেন, সকলেই এই দিনে মন খারাপ করে বসে থাকেন। কেউ কেউ আবার পুরানো সেই দিন ফিরে পাওয়ার আশাও দেখে না এখনও। বন্ধ হয়ে যাওয়া শতাব্দী প্রাচীন এই কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজো দেখতে একসময় বহু মানুষ আসতেন। সকাল সাড়ে নটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত দর্শকদের কারখানার ভেতরে পুজো দেখার সুযোগ দেওয়া হত।
যদিও পরে দিল্লি সরকারের নির্দেশে কারখানার ভেতরে বহিরাগতদের ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে শ্রমিক, কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সকলে কারখানার এই বিশাল উৎসবের অংশগ্রহণ করতেন। তবে সেসব দিন এখন গল্প হয়ে গিয়েছে সকলের কাছে। বিশ্বকর্মা পুজো আর জৌলুশ নেই এখানে। রয়ে গিয়েছে শুধু মনখারাপ। কারখানা আবার খুলবে, এমন আশাও আর বেশিরভাগ মানুষই দেখেন না।
নয়ন ঘোষ