Tag Archives: Durga Puja Travel
Durga Puja Trip: পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন অপরূপ এই রাজবাড়ি, ইতিহাস-রাজবাড়ির সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে
Ancient Durga Puja 2024: পূজিত প্রাচীন নিমকাঠের প্রতিমা! সাবেকিয়ানার স্বাদ অনুভব করতে আসুন কয়েকশো বছরের এই শারদোৎসবে
নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঁকুড়া: প্রায় ৪০০ বছর আগে বারো ভুঁইয়ার অত্যাচারে বাংলাদেশ থেকে প্রতাপ আদিত্যের বংশধররা আসেন বাঁকুড়া জেলায়। যা তৎকালীন সময়ে ছিল অবিভক্ত বাংলা। আজকের যশোর থেকে অত্যাচারিত হয়ে তাঁরা চলে আসেন এপার বাংলায়। অবস্থান করেন বর্তমান সময়ের বাঁকুড়া জেলার ওন্দার দামোদরবাটি গ্রামের পশ্চিমের জঙ্গলে।
পরবর্তীকালে বসবাসস্থলের পাশে একটি নদী থেকে উদ্ধার করা হয় নিম কাঠের মা মৃন্ময়ীর মূর্তি। সেই সময় বিষ্ণুপুরের রাজা অম্বিকানগর যেতেন দামোদরবাটি গ্রামের উপর দিয়ে। রাজার দৃষ্টি আকর্ষণ করে কাঠের মূর্তি। তিনি বিষ্ণুপুরে নিয়ে যেতে চান মায়ের মূর্তি। প্রতাপ আদিত্যের বংশধরেরা রাজার হাতে তুলে দিতে চাননি মায়ের মূর্তি। বাধ্য হয়ে বিষ্ণুপুরের রাজা ১৪ টি মৌজা দান করেন তাঁদের এবং উপাধি দেন চৌধুরী। তখন থেকেই শুরু চৌধুরী রাজবাড়ির। প্রতিষ্ঠিত হয় মা মৃন্ময়ীর মন্দির। সেই তখন থেকেই প্রায় ৪০০ বছর ধরে নিম কাঠের মূর্তি পূজিত হয়ে আসছে মহা সমারহে।
বাঁকুড়া জেলার দামোদরবাটি গ্রামের চৌধুরী রাজবাড়ির প্রতিমার কাঠামো একেবারে অন্য ধরনের। প্রতিমাতে স্থান পেয়েছে মায়ের গোটা সংসার। একদম উপরে অবস্থান করছেন মহাদেব। ১৬ টি মূর্তি সম্বলিত এই পুরো কাঠামোটি। বৈষ্ণবী ধারা অনুযায়ী সপ্তমী অষ্টমী নবমীতে চালকুমড়ো এবং আখ বলি হয় পুজোতে। সাবেকী পুজোয় চাকচিক্য না থাকলেও রয়েছে বহু ইতিহাস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের টানে দামোদরবাটি গ্রামে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে অষ্টমীর দিন ঢল নামে মানুষের। এখনও দেখা যাবে পুরনো রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। সেই ধ্বংসাবশেষের আড়ালে যেন আটকে রয়েছে কত না বলার ইতিহাস কত না বলা গল্প।
আরও পড়ুন : ছেলেরা খোঁজ রাখে না, অবহেলা ও দারিদ্রে প্রতিবেশীদের ভরসায় দিন কাটে অসহায় স্বামীহীনা বৃদ্ধার
থিম পুজোর জাঁকজমক এবং চাকচিক্য থেকে বেরিয়ে যদি সাবেকিয়ানা অনুভব করতে চান তাহলে অবশ্যই আসন্ন দুর্গাপুজোয় চলে আসুন বাঁকুড়া জেলার দামোদরবাটি গ্রামে। পুরানো গড় দরজা পেরিয়ে সুবিশাল রাজ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন পৌঁছে গেছেন তৎকালীন সময়ে। রাজ পরিবারের বংশধরদের মুখেই শুনতে পারবেন রাজবাড়ির এবং মা মৃন্ময়ীর ইতিহাস।
Weekend Trip: বর্ষায় পুরুলিয়া মোহময়ী! ভালবাসার সঙ্গীকে নিয়ে একদিন কাটান এই রিসর্টে! জীবনে ভুলতেই পারবেন না
North Bengal Trip: পাহাড়ের বুক চিড়ে বইছে উচ্ছল রিয়াং, পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন কালিম্পংয়ের এই গ্রামে
Weekend Trip: পাথরের গা বেয়ে আছড়ে পড়ছে জলধারা, বর্ষায় মোহময়ী রূপের ভাগীদার হতে পৌঁছন এখানে, কলকাতার কাছেই এই জায়গা
Weekend Trip: ডুয়ার্সের এই সৌন্দর্য দেখেননি নিশ্চিত! পুজোয় গন্তব্য হোক এই গ্রাম! সারাজীবন মনে থেকে যাবে
Bankura Archaeology: জলের নীচ থেকে উঠে আসে প্রাচীন মন্দির, বাঁকুড়া জুড়ে ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের মণিমুক্তো
Weekend Tour Destination: ঝিমঝিম বৃষ্টিভেজা রাতে মৃদু আলোয় মনের মানুষের পাশে, ছোট্ট বিরতিতে বেড়াতে আসুন ঘরের কাছে এই রাজবাড়িতে
সৈকত শী, পটাশপুর: ক্যালেন্ডারের পাতায় শ্রাবণ মাস মানে বর্ষাকাল। বর্ষাকাল মানে একঘেয়েমি। একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পেতে বেড়াতে মন চায়। কিন্তু হাতের কাছে বর্ষায় ঘোরার মত জায়গা খুব কম। যদিও বা আছে তাও বেশ কয়েকবার ঘোরা হয়ে গিয়েছে। ফলে কোথায় যাবেন তা ভেবে খুঁজে পাচ্ছেন না। বর্ষার রাতে ঝিমঝিম বৃষ্টি আর পুরনো রাজবাড়ির মৃদু আলো। কল্পনা করে দেখুন কত রোমাঞ্চকর বিষয়। বছরের অন্যান্য সময় থেকে বর্ষাকালে রাজবাড়িগুলির পরিবেশ তার ঐতিহ্যের জানান দেয়। রাজবাড়ির দালানে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে বর্ষা দেখার মজা আলাদাই। চুটিয়ে বর্ষার মজা উপভোগ করতে এই বর্ষায় মনের মানুষের সঙ্গে গন্তব্য হোক পুরানো রাজবাড়ি।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরে অবস্থিত পঁচেটগড় রাজবাড়ি। দাস মহাপাত্র পরিবারের এই রাজবাড়ি গড়ে ওঠার পিছনে আছে চমকপ্রদ ইতিহাস। এই রাজবাড়ির পূর্বপুরুষ কালা মুরারিমোহন দাসমহাপাত্র ছিলেন বিখ্যাত সেতারবাদক। তাঁর সেতার বাজানোর খ্যাতি পৌঁছে যায় দিল্লির মুঘল দরবারে। মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাম্রলিপ্ত বন্দরের প্রশাসকের কাজ দেন। তাঁর কাজে খুশি হয়ে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব পটাশপুর পরগনার জায়গির দান করেন। শিবের উপাসক এই দাস মহাপাত্র বংশের পূর্বপুরুষরা। স্থাপন করে পঞ্চ শিবের মন্দির। পঞ্চ শিবমন্দির লোকমুখে পরিবর্তিত হতে হতে আজকে এই পঁচেট গড়। পরে এই রাজপরিবার বৈষ্ণব ধর্মের অনুরাগী হয়। স্থাপিত হয় বর্তমান কুলদেবতা কিশোররাই জিউ-র মন্দির।
স্থাপত্য শিল্পকলার দিক থেকে বিভিন্ন মন্দির ও বিভিন্ন স্থাপত্য বিভিন্ন স্থাপত্য ঘরানার নিদর্শন পাওয়া যায় পঁচেটগড়ে। বাংলার পঞ্চরত্ন স্থাপত্যকলা থেকে ওড়িশার রথ দেউল স্থাপত্য কলা এবং দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যকলার নিদর্শন পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থাপত্য পাশ্চাত্য রীতির নিদর্শন পাওয়া যায়। পঁচেটগড়ের জমিদাররা ছিলেন সঙ্গীত, শিল্প ও ধর্মের সত্যিকারের সহযোগী। রাজবাড়ির সেন্ট্রাল হলকে “দ্য জলসাঘর” বলা হয়। এখানে এক সময় ভারত বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন।
আরও পড়ুন : সুগার কমিয়ে বয়স হাঁটবে উল্টো দিকে! কোষ্ঠকাঠিন্য সাফ! ভাতের পাতে রাখুন ডিম্বাকৃতি বর্ষার এই সবুজ সবজি
বর্তমানে হেরিটেজ তকমা পাওয়া রাজবাড়ি ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। কলকাতা থেকে মাত্র ১৯০ কিলোমিটার দূরে। সহজেই সড়কপথে পৌঁছানো যায় পঁচেটগড় রাজবাড়িতে। পঁচেটগড়ে অবস্থিত অনেক মন্দিরের পাশাপাশি রয়েছে এগরার হাটখোলা মন্দির। দিঘা থেকে পঁচেটগড়ের দূরত্ব মাত্র ৪৭ কিলোমিটার। প্রাচীন জনপদের ইতিহাসের হাতছানি আপনাকে নিয়ে যাবে প্রায় ৫০০ বছর পিছনে।
বর্তমানে রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হোম স্টে। কড়িবড়গার ছাদে প্রাচীন রাজবাড়ির অন্দরে রাত্রি কাটানোর রয়েছে সুবন্দোবস্ত। মাথাপিছু খরচ দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা। এই রাজবাড়ির সদস্য ফাল্গুনী নন্দন দাসমহাপাত্র এই হোমস্টে-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। ফোনে অগ্রিম বুকিং করে ঘুরে আসুন প্রাচীন জনপদ এই পঁচেট গড়ে।