Tag Archives: Fair

Hazari Kali Mela: গৌড়েশ্বর নদীর তীরে হাজারি কালী মেলার ইতিহাস জানুন

উত্তর ২৪ পরগনা: সুন্দরবনের গৌড়েশ্বর নদীর তীরে শুরু হল হাজারি কালী মেলা। এ যেন মুক্তকেশীকালীর মেলা। শাড়ি দিয়ে পূজিতা হয়েছেন মা কালী। হিঙ্গলগঞ্জের খেজুরবেরিয়া গ্রামের দৃশ্য এটি।

উপকূলবর্তী খেজুরবেরিয়া গ্রামের গৌড়েশ্বর নদীর তীরে বহুদিন ধরে হয়ে আসছে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী হাজারী কালীর মেলা। চলতি বছর এই হাজারি কালী মেলা ১১৯ বর্ষে পদার্পণ করল। এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল, প্রতিবছর চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে মহা ধুমধাম করে হাজার হাজার ভক্ত সমাগমের মধ্য দিয়ে কালীপুজো হয়। কথিত আছে, গ্রামের সন্ন্যাসী মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে এই মন্দিরের নাম হাজারি কালি মন্দির কেন তা এলাকার মানুষের কাছে অজানা।

আর‌ও পড়ুন: নতুন বছরের শুরুতেই একের পর এক দোকানে আগুন, পুড়ে ছাই সবকিছু…

বহু ভক্ত তারা মানত করেন এবং মানত শোধ করার উদ্দেশ্যে শত শত প্রতিমা নিয়ে জড়ো হন মন্দির চত্বরে। একসময় বাংলাদেশ থেকেও কালী ভক্তরা এখানে পুজো দিতে আসতেন। এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনী। বিপদে পড়ে কেউ মায়ের কাছে এলে তিনি বিপদ থেকে উদ্ধার হবেনই, এমনই ধারণা আছে মানুষের মধ্যে।

জুলফিকার মোল্লা

Chhatu Sankranti Mela: একবেলার ছাতু সংক্রান্তি মেলার নাম শুনেছেন? রোদ উঠে বালি গরম হলেই বাড়ির পথ ধরে সবাই

পশ্চিম মেদিনীপুর: মেলা এখন সকলের কাছে অতি পরিচিত। সারা বছর বিভিন্ন জায়গায় নানা মেলা আয়োজিত হয়। হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। বসে রকমারি দোকান থেকে খাবারের দোকান। কিন্তু মাত্র এক বেলার একটি মেলা এই বাংলায় হয় বলে জানতেন কি? তাও আবার নদীর বালির চরে। এই এক বেলার মেলায় বাংলার পাশাপাশি প্রতিবেশী ওড়িশার মানুষ‌ও অংশগ্রহণ করে।

এই এক বেলার মেলা উপলক্ষে নদীতে পুণ্য স্নান থেকে বেচা কেনা সবই হয়। বাংলা-ওড়িশা সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন নদীর ঘাটে হয় একবেলার বালি মেলা। তপ্ত বালিতেই বসে দোকান, বিক্রি হয় হরেক রকমের জিনিসপত্রের। বহুকাল ধরে চৈত্র সংক্রান্তির দিন একবেলার এই মেলা চলে আসছে।

আর‌ও পড়ুন: আনারসের কালাকাঁদ, কামরাঙা সন্দেশ মাতিয়ে দেবে পয়লা বৈশাখ! দেখুন লোভনীয় ছবি

বাংলা নববর্ষের আগের দিন অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিনে সংক্রান্তির পুণ্যতিথিতে সুবর্ণরেখা নদীর চরে বসে এই একবেলার মেলা। পশ্চিম মেদিনীপুরে দাঁতনের বেলমুলা, বালিডাংরি, সদরঘাট সহ একাধিক নদী ঘাটে হয় এই মেলা। এই মেলাকে ঘিরে রয়েছে নানান কাহিনী। চৈত্র সংক্রান্তির দিন বালি যাত্রায় মেতে ওঠেন বাংলা ও ওড়িশার মানুষজন। দুই রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় সুবর্ণরেখা নদীর চরে এই মেলা হয়। যার নাম ছাতু সংক্রান্তির মেলা।

এখানে মূলত সংক্রান্তির দিন পূর্ব পুরুষদের পিণ্ডদানের ধর্মীয় রীতি পালন করা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই মেলায় চলে পূর্বপুরুষের উদ্দেশে পিণ্ড দান। তারপরেই ছাতু খাওয়া শুরু করেন মেলায় অংশ নেওয়া পুণ্যার্থীরা।

এই মেলার একটি বিশেষত্ব লক্ষ্য করা যায়। বেলমূলা থেকে বারাসতী পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার নদীর চরের একদিকে বাংলা ও অপরদিকে ওড়িশা। দুই রাজ্যের মানুষের যাতায়াত যাতে সহজে হতে পারে তাই এমন জায়গাগুলোতেই মেলা বসে। বহু মানুষ পূর্বপুরুষদের তর্পণের উদ্দেশ্যে নদী ঘাটে আসেন।শুধু তর্পন না, মেলায় ঘোরা ও চৈত্র সংক্রান্তির পূন্যস্নানে মাতেন দুই রাজ্যের মানুষজন।

জলে হাঁটু মুড়ে বসে কেউ বালির উপর কলাপাতায় আতপচাল, পাকা কলা দিয়ে মণ্ড, আবার কেউ মুড়ির ছাতু, গুড়, দুধ, কলা, কাঁচা আম, আতপ চাল, তিল, মধু মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করেন। আবার কেউ কেউ সেদ্ধ চাল, কাঁচা আম, আলু ও অন্যান্য আনাজ দিয়ে তর্পণ করেন। সঙ্গে ফুল, ধূপ তো থাকেই। পুরোহিতের বলা মন্ত্র উচ্চারণের পর তর্পণের নৈবেদ্য সুবর্ণরেখার জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

আর‌ও পড়ুন: হেলা ফেলার পুঁইশাক ফলিয়ে এবার পকেট ভরুন

এরপর নদীতে স্নান সেরে মেলায় ঘোরেন সবাই। রোদ লেগে বালির তপ্ত হয়ে পায়ে ছ্যাঁকা দিলেই পাততাড়ি গুটিয়ে মেলা শেষ করে সবাই আবার বাড়ির পথ ধরেন। তর্পণের জন্য আসা মানুষের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চাহিদার কথা মাথায় রেখে বসে মেলা। খাওয়ার দোকান থেকে যাবতীয় সামগ্রীর দোকান বসে।

রঞ্জন চন্দ

Traditional Fair: এখানেই পাতালে প্রবেশ করেছিলেন মা গঙ্গা! চক্রতীর্থের নন্দার মেলায় স্নানের হিড়িক

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: দক্ষিণবঙ্গের হেরিটেজ সাইট চক্রতীর্থে শুরু হল ঐতিহাসিক নন্দার মেলা। আদি গঙ্গায় পূণ্যস্নান উপলক্ষে প্রতিবছর চৈত্র মাসের অমাবস্যার পূণ্যতিথিতে এই স্নান অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীর আগমনে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এই মেলা।

ঐতিহাসিক দিক থেকে বিচার করলে এই মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। কথিত আছে, মা গঙ্গাকে ভগীরথ যখন সমতলে নিয়ে আসছিলেন সেই সময় এখানে মা গঙ্গার পাতাল প্রবেশ ঘটে। পরে ভগীরথ আবার ধ্যানমগ্ন হলে মা গঙ্গা এখানেই তাঁর হাতের চক্র তুলে ধরেন। সেই থেকে এলাকার নাম হয়ে যায় চক্রতীর্থ। পাশেই চক্রতীর্থ মহাশ্মশান।

আর‌ও পড়ুন: সুকান্তর এইমসের পাল্টা বিপ্লবের মেডিকেল কলেজ, স্বাস্থ্যের ‘স্বাস্থ্য উদ্ধার’ ঘিরে তর্জায় দু’পক্ষ

এখানেই বসে মেলা। এই মেলা প্রতিবছর মিলন মেলায় পরিণত হয়। মেলা উপলক্ষে গঙ্গা আরতির আয়োজনও করা হয়। এই বছর‌ও তার কোনও ব্যাতিক্রম হয়নি। রকমারি জিনিসপত্র থেকে শুরু করে হাতের কাজের জিনিস, মিষ্টি দোকান সবই থাকে এই মেলায়।

মেলা চলাকালীন অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নজরদারি চালানো হয় যাতে কোন‌ওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। রায়দিঘি ও মথুরাপুর থানার উদ্যোগে চলে যৌথ নজরদারি। সব কিছু এই কয়েকটি দিন প্রকৃত অর্থে মিলনমেলায় পরিণত হয়ে ওঠে চক্রতীর্থ এলাকা।

নবাব মল্লিক

Baruni Mela 2024: বারুনী মেলায় জারি ১৪৪ ধারা! ঠাকুরনগর দিশেহারা মতুয়া ভক্তরা

উত্তর ২৪ পরগনা: ঠাকুরনগরে মতুয়া ধর্মালম্বীদের বারুনি মেলায় ১৪৪ ধারা জারি ঘিরে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। তারই মাঝে জোর কদমে চলছে মেলা উপলক্ষ‍্যে মন্দির সাজিয়ে তোলা। বিপুল পরিমাণ ভক্তদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত-সহ মেলার প্রস্তুতি তুঙ্গে।

ঠাকুরনগরের মেলা বা ঠাকুরনগর মতুয়াধর্ম মহামেলা হল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একটি বিখ্যাত মেলা। মেলাটি প্রতিবছর চৈত্র মাসের প্রথম বা মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয় এবং সাত দিন ধরে চলে। মেলাকে কেন্দ্র করে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, ছত্তিসগড়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা-সহ দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্য থেকেই মতুয়া ভক্তেরা ঠাকুরবাড়ি আসেন।

আরও পড়ুন: গরমে সারাদিন চলছে এসি, হু হু করে ইলেকট্রিক বিল বাড়ার ভয়? এই নিয়ম মেনে চালালেই কেল্লাফতে, বিল আসবে অনেক কম

বাংলাদেশ, মায়ানমার থেকেও আসেন অনেক ভক্ত। পুণ্য তিথিতে ‘কামনা সাগর’-এ ডুব দিয়ে পুণ্যস্নান সারতে চান সকলে। প্রতি বছর হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধু কৃষ্ণত্রয়োদশীতে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে মেলা শুরু হয়। মেলা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ১৮৯৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে ওই মেলার সূচনা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে ১৯৪৮ সালে ঠাকুরনগরে মেলা শুরু করেন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর।

করোনার কারণে মাঝে এক বছর মেলা অনুষ্ঠিত না হলেও, তারপর থেকে প্রতি বছরই মেলা হয়ে আসছে। এবছর ৬ এপ্রিল এই বারুনী মেলা পুন্যস্নান দিয়ে শুরু হবে। পরবর্তীতে ৭ দিন ধরে চলবে এই মেলা। ইতিমধ্যেই মেলার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। দূর দূরান্ত থেকে মতুয়া ভক্তরাও আসা শুরু করেছে।

তবে এই ১৪৪ ধারা নিয়ে এখনও নানা প্রশ্ন রয়েছে মতুয়া ভক্তদের মধ্যে। মেলার মধ্যে কীভাবে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা, তা নিয়েও কৌতুহল রয়েছে ঠাকুরনগর জুড়ে। মতুয়া ধর্মালম্বীদের একাংশ অভিযোগ তুলছেন মেলা বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে, অপরাংশের মতে, মেলায় যাতে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্যই এই ১৪৪ ধারা জারি। আর তা নিয়েই এখন চলছে জোর বিতর্ক।

Baruni Mela 202 : বারুনী মেলায় জারি ১৪৪ ধারা! ঠাকুরনগর দিশেহারা মতুয়া ভক্তরা

উত্তর ২৪ পরগনা: ঠাকুরনগরে মতুয়া ধর্মালম্বীদের বারুনি মেলায় ১৪৪ ধারা জারি ঘিরে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। তারই মাঝে জোর কদমে চলছে মেলা উপলক্ষে মন্দির সাজিয়ে তোলা। বিপুল পরিমাণ ভক্তদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত-সহ মেলার প্রস্তুতি তুঙ্গে।

ঠাকুরনগরের মেলা বা ঠাকুরনগর মতুয়াধর্ম মহামেলা হল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একটি বিখ্যাত মেলা। মেলাটি প্রতিবছর চৈত্র মাসের প্রথম বা মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয় এবং সাত দিন ধরে চলে। মেলাকে কেন্দ্র করে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, ছত্তিসগড়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা-সহ দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্য থেকেই মতুয়া ভক্তেরা ঠাকুরবাড়ি আসেন।

আরও পড়ুন: গরমে সারাদিন চলছে এসি, হু হু করে ইলেকট্রিক বিল বাড়ার ভয়? এই নিয়ম মেনে চালালেই কেল্লাফতে, বিল আসবে অনেক কম

বাংলাদেশ, মায়ানমার থেকেও আসেন অনেক ভক্ত। পুণ্য তিথিতে ‘কামনা সাগর’-এ ডুব দিয়ে পুণ্যস্নান সারতে চান সকলে। প্রতি বছর হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধু কৃষ্ণত্রয়োদশীতে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে মেলা শুরু হয়। মেলা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ১৮৯৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে ওই মেলার সূচনা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে ১৯৪৮ সালে ঠাকুরনগরে মেলা শুরু করেন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর।

করোনার কারণে মাঝে এক বছর মেলা অনুষ্ঠিত না হলেও, তারপর থেকে প্রতি বছরই মেলা হয়ে আসছে। এবছর ৬ এপ্রিল এই বারুনী মেলা পুন্যস্নান দিয়ে শুরু হবে। পরবর্তীতে ৭ দিন ধরে চলবে এই মেলা। ইতিমধ্যেই মেলার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। দূর দূরান্ত থেকে মতুয়া ভক্তরাও আসা শুরু করেছে।

তবে এই ১৪৪ ধারা নিয়ে এখনও নানা প্রশ্ন রয়েছে মতুয়া ভক্তদের মধ্যে। মেলার মধ্যে কীভাবে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা, তা নিয়েও কৌতুহল রয়েছে ঠাকুরনগর জুড়ে। মতুয়া ধর্মালম্বীদের একাংশ অভিযোগ তুলছেন মেলা বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে, অপরাংশের মতে, মেলায় যাতে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্যই এই ১৪৪ ধারা জারি। আর তা নিয়েই এখন চলছে জোর বিতর্ক।

Rudra Nrayan Roy

Heritage Local Fair: হিঙ্গলগঞ্জের শতাব্দী প্রাচীন দোল মেলার পরতে পরতে জড়িয়ে ইতিহাস

উত্তর ২৪ পরগনা: দোল চলে গেলেও এখনও হিঙ্গলগঞ্জে চলছে শতাব্দী প্রাচীন দোল মেলা। আর এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দারুন সব ইতিহাস। আজকের এই প্রতিবেদনে হিঙ্গলগঞ্জের দোল মেলার সেই সমৃদ্ধ ইতিহাসের কথা তুলে ধরা হবে আপনাদের সামনে।

সাজসজ্জায় শুধু দেবতাকে রাঙিয়ে তোলা নয়, দোল উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে জীবনের নানা রং। এই দোলকে কেন্দ্র করে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বসে মেলার আসর। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হিঙ্গলগঞ্জের এই দোল উৎসব বেশ বিখ্যাত। প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি সহ বিভিন্ন দ্বীপ থেকে এই মেলায় আসেন হাজার হাজার ভক্ত। এই মেলার পাশেই বৃন্দাবনচন্দ্র জিউর মন্দির অবস্থিত। সেখানে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ রেখে চলে পুজো অর্চনা ও প্রসাদ বিতরণ।

আর‌ও পড়ুন: আউশগ্রামের জঙ্গলে ভয়াবহ আগুন, অনেক বুঝিয়েও সম্বল সেই ব্যর্থতা

দোল পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে আয়োজিত শতাব্দী প্রাচীন এই মেলায় এক সময় প্রতিবছর কোলকাতার চিৎপুর থেকে নাটকের দল আসত। যদিও বর্তমানে সেই নাট্যদলের দেখা না মিললেও মেলার আভিজাত্য মোটেও কমেনি। এক সপ্তাহ ধরে এই মেলা চলে। শতাধিক স্টল বসে এই মেলায়। মেলায় এক দিকে যেমন রয়েছে বিদ্যুৎচালিত নাগরদোলা, কিংবা ছোটদের মনোরঞ্জনের হরেক উপকরণ, তেমনই অন্য দিকে পাওয়া যায় পিতলের বাসনপত্র, কসমেটিক্সের স্টল, বেতের ধামা, সাজি থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় নানান জিনিস। সব মিলিয়ে দোল উপলক্ষে সুন্দরবন এলাকায় আয়োজিত এই মেলায় দ্বীপ অঞ্চল থেকে মানুষের ভিড় দেখা যায় যথেষ্ট।

জুলফিকার মোল্লা

Kunj Mela: কুঞ্জ মেলায় জীবন্ত রাধা সাজেন পাড়ার ছেলেরা! থাকে শ্রীকৃষ্ণের পছন্দের কচু শাক ও মানের ডালনা

নদিয়া: একমাস ধরে চলে ফুলিয়া উমাপুরের কুঞ্জমেলা। এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ হল জীবন্ত রাধা-কৃষ্ণের দর্শন। পাড়ার ছেলেরাই রাধাকৃষ্ণ বেশে সেজে মেলায় হাজির থাকে। প্রতিদিন সন্ধেয় এই সাজেই শ্রীকৃষ্ণের নানান অবতারকাহিনী তুলে ধরা হয় মেলায় আগত দর্শকদের সামনে।

আর‌ও পড়ুন: ছাদ টপকে ঘুমন্ত শিশুকে তুলে নিয়ে চম্পট! চিৎকার করে উঠতেই ফেলে রেখে পালাল দুষ্কৃতীরা

অন্যান্য বছরের মতোই এই বছরও নন্দ উৎসব ও কুঞ্জমেলা-কে কেন্দ্র করে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে নদিয়ার ফুলিয়ায় উমাপুর এলাকা। এবছর ৬৫ তম বর্ষে পা দিল এই মেলা, তবে এটা ভারতে মেলা শুরু হওয়ার হিসেব। বাংলাদেশে তারও অনেক আগে থেকে এই কুঞ্জ মেলা আয়োজিত হত। এই কুঞ্জ পুজোকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও বহু মানুষ এই উৎসবে যোগ দেন, বসে মেলা।

তিথি-নক্ষত্র মেনে শুরু হয় এই উৎসব। চলে চৈত্র মাসের প্রথম রবিবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধেতে শ্রীকৃষ্ণের নামকরণ, পুতনা বধ, মনিপারোনা, দধি মন্থন, বস্ত্রহরণ, দুর্গাপুজো, কালী পুজো, জগবন্ধুপুজো, রাসলীলা, মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকা- এই ধরনের বিভিন্ন আখ্যান নিয়ে পালা অনুষ্ঠিত হয়। উমাপুরের ছেলেরাই বংশানুক্রমে এইসব পালায় অভিনয় করেন। মহিলা চরিত্রগুলিতেও অভিনয় করেন পুরুষরাই।

১৩৬৫ বঙ্গাব্দে বাংলাদেশের বরাব ধামে শ্রীকৃষ্ণের জীবনী সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা ভক্তবৃন্দদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশে পুজোর মাধ্যমে এই মেলার সূচনা হয়েছিল। পরবর্তীকালে শ্রীমৎ শশীমোহন বর্ধন এবং শ্রী কুঞ্জমোহন দাস-এর সাহচর্যে নদিয়ার ফুলিয়ার উমাপুর এলাকায় এই উৎসব পালন শুরু হয়। শান্তিপুর, ফুলিয়া-সহ নদিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তবৃন্দর সমাগম এবং অংশগ্রহণ থাকলেও, মূলত এলাকাবাসীরাই পালা করে এই উৎসবের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F

কৃষ্ণ-আখ্যান নির্ভর পালা ছাড়াও এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ কীর্তন। উমাপুরের স্থানীয় এক কীর্তন দল বংশ পরম্পরায় কীর্তন পরিবেশন করে এই উৎসবে। রাধা-কৃষ্ণের মিলন পালার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। পরের দুটি দিনে চলে কবিগান এবং বাউল গান। এই উপলক্ষে এলাকার সকলের বাড়িতে থাকে সকলের নিমন্ত্রণ। খাবার-দাবার সব অবশ্যই নিরামিষ হয়। অবশ্যই থাকে শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম প্রধান পছন্দের খাবার কচু শাক এবং মানের ডাল। শুধু নদিয়া নয়, কোচবিহার, এমনকি বাংলাদেশেও এই পুজোর প্রচলন রয়েছে।

মৈনাক দেবনাথ

Ganga Aarti: উল্টো পথে বয়ে চলেছে স্রোত! গঙ্গা না হয়েও তার পাড়ে ‘গঙ্গা আরতি’

জলপাইগুড়ি: এবার‌ও হবে গঙ্গা আরতি। ভাবছেন তো জলপাইগুড়িতে আবার গঙ্গা কোথায়? এ তো অবাক কথা! জলপাইগুড়ির ডাঙা পাড়া গৌরি হাট সংলগ্ন বারুনি স্নানের মধ্য দিয়েই প্রতি বছর পবিত্র গঙ্গা স্নান সারেন পুণ্যার্থীরা।

আর‌ও পড়ুন: গান শুনে সাদা কাগজে প্রকাশ করতে হল আবেগ ও ভাবনা! আইআইটি খড়গপুরে বিশেষ আসর

এই বারুনি স্নান হল বহমান করলা নদীতে স্নান। তবে এর একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই নদীর স্রোত উল্টো পথে বয়ে চলে। তাই এই নদী উত্তরের গঙ্গা হিসেবে পরিচিত। তবে আরও একটি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে এবার। এবার গঙ্গা স্নানের পাশাপাশি হবে গঙ্গা আরতি। যা এতদিন কাশী, বেনারস, কলকাতার মত গঙ্গা নদীর তীরে হতে দেখা গিয়েছে। এই প্রথম জলপাইগুড়ি জেলায় গঙ্গা আরতী তথা করলা নদীর তীরে আরতি হবে বলে জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।

আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F

এই আরতি করার জন্য সুদূর কাশি থেকে পন্ডিতরা আসছেন। ডাঙাপাড়া শ্মশান কালী মন্দিরের উদ্যোগে এই আরতির প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। আগামী ৬ এপ্রিল থেকে টানা ৭ দিন চলবে এই আয়োজন। গৌরীহাট বারুণি মেলা জলপাইগুড়ি শহর তথা জেলায় খুবই বিখ্যাত ও জনপ্রিয়। ৭ দিনের ঐতিহ্যবাহী বারুনি মেলা নিয়ে এবারেও উৎসবের আমেজ এলাকাজুড়ে। জানা গিয়েছে, অতি প্রাচীনকাল থেকেই এখানে বহমান উত্তরবাহী করলা নদীর ঘাটে পবিত্র বারুণি স্নান এবং মেলার আয়োজন অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের দ্বাদশ তিথিতে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করলা নদীর উত্তরবাহী স্রোতে পবিত্র পুণ্য স্নানে সামিল হন বহু দূর-দূরান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীরা। নারী পুরুষ, ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে এই পুণ্যস্নানে অংশগ্রহণ করে। মস্তক মুণ্ডন করে পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে নদীর জলে তর্পণ করেন তাঁরা।

সুরজিৎ দে

Bengali News: ডালিম গাছের তলায় ধ্যানে বসে সরস্বতী হয়ে ওঠেন সতী মা! ৩০ একর জুড়ে চলছে তাঁর মেলা

নদিয়া: জমজমাট নদিয়ার সতী মায়ের মেলা। ভক্তদের ভিড় মন্দির চত্বরে। চিরাচরিত প্রথা মেনে এবারও দোল পূর্ণিমার দিন নদিয়াতে সতী মায়ের পুজো হয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন দোলযাত্রার এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে নজর কাড়ে সতী মায়ের বিখ্যাত দোল মেলা।

বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই মেলায় আসেন। ভক্তদের দাবি, গঙ্গাসাগর মেলা, জয়দেবের মেলার থেকে কোনও অংশে কম ভিড় হয় না এই সতী মায়ের মেলায়। নদিয়ার কল্যাণীর ঘোষপাড়ায় অবস্থিত বিখ্যাত সতী মায়ের মন্দির। বৈষ্ণবদের কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মানবী দেবী বলে পরিচিত সতী মা। দোল পূর্ণিমার দিন দেবীর পুজোকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই মন্দির প্রাঙ্গনে ভক্তদের ভিড় লেগে যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দেন, অনেকে আবার দন্ডি কাটেন। পুকুরে ডুব’ও দেন অনেকে।

আর‌ও পড়ুন: লিচুতে ভরে উঠবে গাছ, শুধু এই নিয়মটা মানুন

এখানে আসা ভক্তদের বিশ্বাস, পুকুরে স্নান করে ডালিম গাছে ঢিল বাঁধলে দেবী মনস্কামণা পূর্ণ করেন। দোলের দিন বেশি করে সেই ছবি ধরা পড়ল। পুজো উপলক্ষে এবছরও যথারীতি বিরাট মেলা বসেছে। একসময় প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে সতীমায়ের মেলা বসত। বর্তমানে তা বাড়তে বাড়তে ৩০ একর এলাকায় মেলা বসছে। এই মেলা পরিচালনা করে কল্যাণী পুরসভা।

সতী মায়ের মেলাকে ঘিরে এক ইতিহাস আছে। কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হলেন নদিয়ার ঘোষপাড়ার আউলচাঁদ। ভক্তরা তাঁকে গোরাচাঁদ নামে ডাকতেন। অনেকে তাঁকে শ্রীচৈতন্যের অবতার হিসেবেও মনে করতেন। এই ঘোষপাড়ারই বাসিন্দা ছিলেন রামশরণ পাল। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ছিল সরস্বতী। কথিত আছে, মরণাপন্ন সরস্বতীর সারা গায়ে পুকুর থেকে মাটি এনে লেপে দিয়েছিলেন আউলচাঁদ। তাতেই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন সরস্বতী। পরবর্তীকালে বাড়ির ডালিম গাছের নীচে দীর্ঘ সাধনার পর তিনিই হয়ে ওঠেন সতী মা। আউলচাঁদের পর সতী মা হয়ে ওঠেন কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রধান।

আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F

এখানে প্রচলিত বিশ্বাস হল, সরস্বতী যে ডালিম গাছের নিচে বসে সাধনা করেছিলেন, সেই ডালিম গাছে ঢিল বাঁধলে সব ইচ্ছাপূরণ হয়। ঘোষপাড়ায় তাঁর নামাঙ্কিত মন্দির চত্বর এবং সমাধিক্ষেত্রে ভক্তরা গিয়ে পুজো দেন। পুজোর ডালিও মন্দির চত্বরেই একাধিক ব্যক্তি বিক্রি করেন। ডালিতে ঢিলের জায়গায় দেওয়া থাকে সুতো বাঁধা মাটির ঘোড়া। মন্দিরের কাছেই রয়েছে পুকুর। সেই পুকুরে স্নান করে ভক্তরা মন্দিরে পৌঁছে ডালিম গাছে ঢিল বাঁধেন। আবার মনস্কামনা পূরণ হলে এসে ডালিম গাছ থেকে ঢিল খুলে ফেলতে হয়। এটাই সতী মায়ের মন্দিরের নিয়ম।

এখানে নিত্যপুজোর পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার বিশেষ কীর্তনের আসর বসে। দোলের সময় সতী মায়ের এই মেলাকে কেন্দ্র করে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত ছুটে আসেন।

মৈনাক দেবনাথ

Local News: বউ মেলায় গিয়েছেন কখন‌ও? ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠা এই মেলা কোথায় হয় দেখুন

উত্তর ২৪ পরগনা: বউ মেলা! তাও প্রত্যন্ত সুন্দরবনে। প্রাচীন কাল থেকেই এই মেলাপরিচালনা করে আসছেন মহিলারা।

আরও পড়ুন: ভারতের থেকে শিখে বাংলাদেশে শুরু বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন

সুন্দরবন এলাকার মিনাখাঁর বগিরহুলায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ব‌উ মেলা বা বগীরহুলা বউ মেলা। এই বউ মেলার নিজস্ব ইতিহাস আছে। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে এই মেলার উৎপত্তি। তৎকালীন সময়ে এই এলাকা ছিল সম্পূর্ণ বনাঞ্চলে ঢাকা। কথিত আছে, তৎকালীন সময়ে গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে কলেরা, বসন্তের মত মহামারীর ছড়িয়ে পড়েছিল। গ্রামের শত শত মানুষ মারা যেত। সেই সময় মহামারি থেকে বাঁচতে গ্রামের মহিলারা মা শীতলার পুজো শুরু করেন।

আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F

একপর্যায়ে জায়গাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পুণ্যস্থানে পরিণত হয়। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শেষ সপ্তাহে ওই স্থানে পুজোর আয়োজন করে এলাকার মানুষ। সমাগত ন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে বগিরহুলা মেলার। সেই থেকে আজও রীতিনীতি মেনে প্রতি বছর বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মিনাখাঁর বগিরহুলা গ্রামে মা শীতলার পুজো উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা। শীতলা মঙ্গল গানের মধ্য দিয়ে মেলার শুভ সূচনা হয়। শোনা যায় পূর্বে পুজো-অর্চনা ও এই মেলা মহিলারাই পরিচালনা করতেন। সেই থেকে এই মেলা বউ মেলা নামে খ্যাত। মেলা উপলক্ষে চার দিনব্যাপী বহুদূর দুরন্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত সমাগম হয়, এছাড়াও চার দিনব্যাপী নানান সংস্কৃতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

জুলফিকার মোল্লা